প্রতিবিম্ব # ৮
- Abhijit Chakraborty

- Apr 1, 2020
- 7 min read
Updated: Apr 6, 2020

কুয়াশা মোড়া সকালে লেপের ওম নিতে নিতে পুরোনো বছরের ফেলে আসা মুহূর্ত গুলোকে এপাশ-ওপাশ করে দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। সারাবছর আয়েশ করে কাটানোর লোভে, বছরের প্রথম দিনটা সাধারণত একটু আয়েশ করেই কাটাতে চাই । বিছানাতে শুয়ে শুয়ে আর এক কাপ চা পেলে মন্দ হতো না। গতকালের রাতের কথা ভেবে নিজের ইচ্ছেকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। কি আর এমন করেছি - গাড়ি চালিয়ে ফেরার সময় নিজের বাড়ি চিনতে না পারা টা কি এতটাই অপরাধ! ভালো মেকআপ ও দিয়েছিলাম অবশ্য - "রাতের উষ্ণতার ছোঁয়া নিতে মন আর একটু কলকাতার রাস্তাতে ঘুরতে চাইছিল"। -"ছেলে বড় হচ্ছে,এবার থেকে ওই ছাইপাশ গুলো খাওয়া একটু বন্ধ করো। নিজেকে কন্ট্রোল করতে শেখো। " মশারির ভেতরে ঘুম পাড়ানো গুলি খাওয়া বাঘের মতন আমি জেগে ঢুলছি আর হান্টার হাতে বাইরে রিং-মাস্টারনি ঘুরে বেড়াচ্ছে! -"কন্ট্রোল করেছিলাম বলেই তো আজ আমাদের এক ছেলে" - বলতে চাই নি, ফস করে বেরিয়ে এলো। কন্ট্রোল, কন্ট্রোল - মনকে বোঝাতে শুরু করেছি। -"যেমন নোংরা মন আর তেমনি নোংরা ভাষা। কি করে যে এখনো তোমাকে সহ্য করছি সে একমাত্র ভগবান ই জানেন।" শান্ত শীতল নিস্তব্ধতা। বছরের প্রথম দিনের সকালটা এই রকম নিমতিতো হবে সেটা আশা করি নি। মোটামুটি সারাদিনটা তাহলে নিম্নচাপের উপর দিয়েই চলবে। বিয়ের কিছু বছর পর্য্যন্ত বৃষ্টি দিয়েই নিম্নচাপ কাটতো। এখন ঝড় ওঠে শুধু। মানুষের মন বোঝার কারিগড় হিসাবে আমার এত নামডাক, অথচ কি অদ্ভুত, ঘরের লোকের মন বুঝেও বুঝতে পারি না। সেরোটোনিন, ডোপামিন, অক্সিটন এর ককটেল টা কিছুতেই ঠিকঠাক বানাতে পারছি না। নিউরো ট্রান্সমিটার এর সিগন্যাল গুলোকে ধরতে পারলেই কেল্লাফতে। কেন জানি না, এই কেসটা তে আমাকে দেখলেই সিগন্যাল গুলো আমার সাথে লুকোচুরি শুরু করে দেয় মনের ভুলভুলাইয়া তে। কোল বালিশটা জড়িয়ে ভাবছি কি করে বোঝাই যে কালকের রাতে আমার অন্যমনস্কতার পেছনে কোনো ছাইপাশের হাত নেই। একটা নতুন ইন্টারেস্টিং কেস এসেছে আর আমি সেই কেস এর সমাধানের নেশাতে মশগুল ছিলাম। বছর তিরিশের এক অবিবাহিত যুবক। সুমন মিত্র। ছাপোষা বাঙালির চোরা সর্দি আর অম্বল থেকে নিজেকে যত্ন করে সরিয়ে রাখা সুদর্শন ও সুপ্রতিষ্ঠিত পুরুষ। বহুজাতিক ব্যাঙ্কের প্রভাবশালী জায়গাতে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছে নিজের সপ্রতিভ ব্যবহার ও বুদ্ধির যুগলবন্দী তে। আমার কাছে আসার উদ্দেশ্য তাঁর জীবনের বহু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার অভিপ্রায়ে। রোজকারের একঘেঁয়ে ডাক্তারী র মাঝে এই রকম কিছু মানুষের ভাবনাগুলোই পেশার উপর নিজের ভালোবাসাকে এখনও অটুট রেখেছে। আমার কাছে আসা সব মানুষেরই যে মনের চিকিৎসা করতে হবে তার কোনো বাধ্য বাধ্যকতা নেই। মনকে প্রাথমিক ভাবে যাচাই করার কতগুলো সাধারণ প্রশ্ন থাকে। এই যেমন - "আপনার কোন Hobby আছে কি না! থাকলে সেটা কি? " -"হিমালয়ের টানে বছরের বেশ কিছুদিন সাধুদের সাথে থাকা । " উত্তর শুনেই বুঝেছিলাম কেস'টার একটা মেরিট আছে। সাধুদের সাথে সময় কাটানোর প্রবণতা কোনো নতুন বিষয় নয়। আধ্যাত্মিক ভাবের উদয় যে কোনো বয়সেই হতে পারে। কোনো বিশেষ মানসিক আঘাত বা ছোটবেলা থেকে মনের অগোচরে বেড়ে ওঠা ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ও হতে পারে। মেথড অফ এলিমিনেশনে, প্রথম সন্দেহ হয় ওই মানসিক আঘাতের দিকে। কোন প্রিয়জনের মৃত্যু বা প্রেমের ল্যাং টা কতটা জোরে লেগেছে সেটা বার করতে পারলেই আর বেশি মাথা ঘামাতে হয় না। -"হিমালয়ের টান তো খুব ভালো কথা। কিন্তু ওই সাধুদের সাথে কি রকম ভাবে সময় কাটাতে ইচ্ছা করে?" -"আপনি হয়তো ভাবছেন যে আমার মনে কোনো আধ্যাত্মিক ভাবের জন্ম হয়েছে। " -"মনের ডাক্তাররা জাজমেন্টাল হলে তো চিকিৎসা টাই ভুল হয়ে যাবে।" -"আমার মনের কোনো রোগ হয়েছে , এই ভাবনা টাই তো জাজমেন্টাল। আমি কি কোনো ভুল বললাম ডাক্তারবাবু?" কে যে ডাক্তার আর কে যে রুগী সেটাই এখন গুলিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে এবার একটু আক্রমণ করতে হবে। -"মনের ডাক্তারের সাথে সময় কাটানো টা কি তাহলে এখন নতুন শখ?" -"বাহ। এটা তো ভেবে দেখি নি। বেশ ইম্প্রেসিং ভাবনা।" নিজের মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টায় নিজের নিঃস্বাস গুনছি। -"আপনি তো নিশ্চয়ই কোনো এক সমস্যার সমাধান খুঁজতে এসেছেন আমার কাছে। সমস্যার কথা টা জানতে পারলে সমাধানের রাস্তার খোঁজটা শুরু করতে পারি। আমি কি ভুল বললাম?" -"সমস্যাটা খুব কঠিন নয়। " -" অঙ্কের প্রশ্ন না জেনে তো আমার পক্ষে বলা মুশকিল , সেটা সোজা না শক্ত। " পনেরো মিনিট বাদে বুঝলাম , রুগী আমার ক্লায়েন্ট নন। ক্লায়েন্টর প্রেমিকা, বহ্নি দত্ত। সুমন ও বহ্নির আলাপ বছর তিনেক।প্রতিশ্রুতির পাহাড় কে সাক্ষী করে আগামী মাসের বিয়ের কার্ড বিলি করা হয়ে গেছে। বিগত মাস খানেক আগে পাত্রী হটাৎ করে বিয়ের শর্ত রেখেছে, বিয়ের পর সুমনকে হিমালয়ের সাধুসঙ্গ ছেড়ে দিতে হবে। সুমনের কোনো অসুবিধা নেই সেই শর্ত মানতে কারণ সে নিজে বিশ্বাস করে যে বহ্নির দাবী খুবই ন্যায্য। -"তাহলে সমস্যা টা কোথায়?" -" সমস্যাটা হলো , আমি বিগত দশ দিন প্রায় জনা পাঁচেক মনস্তত্ববিদদের সাথে দেখা করেছি এটা বুঝতে যে আমার এই শর্ত মেনে নেওয়া টা ঠিক কাজ কি না।" -"আমার পেশা তো ম্যারেজ কাউন্সিলিং নয়।" -" শখের সাথে আপোষের লড়াই অদূর ভবিষ্যতে সম্পর্কে পাঁচিল তুলবে সেটা আমি জানি। আর সেই কারণে আমি এমন একজনকে খুঁজছি যে বহ্নি কে এই শর্ত থেকে বিরত করবে। আমার স্থির বিশ্বাস, একমাত্র একজন প্রপার সাইক্রিয়াটিস্ট- বহ্নির মনের অন্দরমহল কে এই অল্প সময়ে চিনতে পারবে। " -" শর্তের মোড়কে বিয়ের থেকে সযত্নে নিজেকে সরিয়ে আনতে চাইছেন কি আপনার বান্ধবী?" -"সেটা খুঁজে বার করার দায়িত্ব তো আপনার। " আমার ধৈর্য্যের বাঁধ বোধহয় সিমেন্টের নয়। কি পেয়েছে আমাকে? বাংলা সিরিয়ালের সস্তা গোয়েন্দা নাকি? অপমানিত হবার একটা লেভেল থাকে! -"কিছু মনে করবেন না, আমার মনে হয় আমি আপনার সমস্যা সমাধান করতে পারবো না। আমি মনের ডাক্তার, গোয়েন্দা নই। বাইরে অনেক পেশেন্ট ওয়েট করছে।" -" আমি কোনোভাবেই জোর করবো না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, কাজের সফলতা বিচার না করে মনকে আনন্দ দিতে পারার কাজের মধ্যেই নিজেকে সবচেয়ে খুশি রাখা যায়। আপনি তো রোজ-ই কাজ করছেন, সবদিন কি নিজেকে খুশিতে রাখতে পারছেন? ভালো থাকবেন, বাইরে অনেকে অপেক্ষা করছেন। " সেই এক ডায়লগ। প্রায় একরকম আত্মবিশ্বাস আর অহংকারের মিশেল। টাইম মেশিনে আমি আবার করে বছর পনেরো আগের এক রাতে। চন্ডীগড়ের পাট চুকিয়ে দিল্লির এক নামকরা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী মনোবিদের চাকরি নিয়ে জীবনের হাইওয়ে তে শুমাখারে'র মতন গাড়ি চালাচ্ছি। মেসোর তলব, অনেকদিন একসাথে সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় নি। দী-পু-দা'কে ছেড়ে কোথাও ব্যবস্থা করার নির্দ্দেশ এসেছে। মিঠি একটা প্রাইভেট স্কুলে বছর খানেক হলো জয়েন করেছে। আমাদের দুজনেরই ছুটি নেবার মুশকিল, তাও মেসোর পছন্দ অনুযায়ী কাজে লেগে পড়লাম। মিঠি এবার আমাদের ট্যুর-ম্যানেজার, স্কুলের এক দিদিমণি র থেকে খোঁজ নিয়ে সব ব্যবস্থা করেছে। সকাল সকাল হাওড়া থেকে ইস্পাত এক্সপ্রেসে ওঠা থেকেই মা আর মাসির ভেঁপু বাজতে শুরু করেছে। বার দশেক চেষ্টা করেও কোথায় যাচ্ছি সেটা মনে রাখতে পারছে না। একবার বলে 'তাবরু' আর একবার বলে 'কিবরু' । নাতি-নাতনি'র মুখ না দেখেই ঘুরতে গিয়ে বাঘের পেটে ইহজীবনের ভবলীলা সাঙ্গ হবে বলে বিলাপ চলছে। মেসো আর বাবা'র গুষ্ঠি উদ্ধার চলছে ওই বিলাপের মধ্যে-ই, কেন এখনো মেয়েকে বিয়ে দিতে পারে নি। আর আমি হচ্ছি ধর্মের ষাঁড়, বোনের অন্ধকার ভবিষ্যৎ দেখেও কোনো হুশ নেই। খাচ্ছি আর মোটা হচ্ছি। আজকাল কথা গুলো এক কান দিয়ে ঢুকে কোথা দিয়ে যে বেরিয়ে যায় বুঝতে পারি না। চক্রধরপুরে টাটা সুমো রেডি ছিল। ব্যবস্থা বেশ পাকা। মিঠির স্বাধীনভাবে নেওয়া নির্ণয় ক্ষমতার উপরে বেশ আস্থা পেলাম আমি ও মেসো। যাক, ও নিজের ষাঁড় নিজেই খুঁজে নিতে পারবে। মেঘাতাবুরুর আকাশ সাঁজবাতি জ্বালিয়ে আমাদেরকে আদর করে নিল পরবর্তী তিন রাতের জন্য। সারেন্ডার জঙ্গল ঘেরা সাড়ে পাঁচশ পাহাড়ের নির্জন প্রকৃতির অপাপবিদ্ধ রূপে আমাদের দীর্ঘ পথের ক্লান্তি কোথায় যেন হুশ করে হারিয়ে গেছে। লাল পলাশ ঘেরা ছিমছাম বাগানবাড়ির পাথুরে প্রবেশ পথে মাধবীলতা'র গন্ধে স্নান করে মেসো আর আমি যখন বাকশূণ্য, হটাৎ করে একটা আর্তনাদ - "ইশশ, সব শেষ। " মেসোর এইরকম অসহায় মুখ সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না। -"কি হয়েছে?" -"সব ব্যবস্থাই কি বোন করবে বলে বসে ছিলিস?" -"মানে? আমি তো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না" -"স্বাভাবিক। শরীরের উপর অংশও যে চেহারার সাথে মোটা হয়েছে সেটা আমার বোঝা উচিত ছিল।" 'ভোদাই'-এর একদম পারফেক্ট ডেফিনশন আমি নিজের মধ্যে খুঁজে পেলাম। বয়স বাড়ছে, অপমানিত হতে ভালো লাগে না। প্রথমে কারণ টা বুঝতে না পারলেও সেটা কে স্বীকার করতে কষ্ট হচ্ছে। নিজেকে একটু এক্সটা স্মার্ট করে বললাম - "প্রকৃতির নেশার কাছে ওই সব নেশা সব ভেজাল। প্রকৃতির কাছে আত্ম-সমর্পণ করে প্রেম নিবেদন করলেই প্রকৃতি তোমাকে ওই নেশার থেকে মুক্তি দেবে।" -"বুঝলাম, আরো একটা কাজ বাড়লো"। মেসোর মুখে চিন্তার রেখা স্পষ্ট। -"আরে তোমাকে কোন কাজ করতে হবে না। বলছি তো লাগবে না। আমার ও বয়স বাড়ছে আর অভিজ্ঞতাও। " -"সেটাই তো আরো চিন্তার। প্রকৃতি প্রেমের কথা শুনে বুঝতে পারলাম, পৌষানী লাথ মেরেছে। মিঠির পাত্র খোঁজার থেকেও বেশি কঠিন কাজ মাথায় চাপলো।" নাহ, আর অপমান নেওয়া যাচ্ছে না। একটা কিছু ব্যবস্থা করতেই হবে। -"স্কচ পাওয়া যাবে না। রয়্যাল চ্যালেঞ্জ হলে চলবে? " ভূতের রাজার গলা নাকি? -"সরি, আপনাকে তো চিনলাম না।" -"আমার নাম অশেষ রায়। এখানকার ম্যানেজার। আপনাদের কে ভালো রাখার দায়িত্বে যত টুকু করা যায়। এখানে তো বড় শহরের মতন অনেক কিছু পাওয়া যায় না।" -"আপনি কি আমাদের কথা পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন?" -"গেস্ট দের কথা শোনা টা বাঞ্চনীয় নয় এবং অনৈতিক। মিঠি ম্যাডাম আপনাদের খোঁজ করছিলেন। নতুন জায়গা, আমি তাই খুঁজতে এসে দেখলাম আপনারা খুব গভীর ভাবে আলোচনা করছিলেন। কেন জানি না মনে হলো আমি হয়তো আপনাদের চিন্তা মুক্ত করতে পারি।" - "অল্পক্ষণের সাক্ষাৎ-এ নাম টাও জানা হয়ে গেল? বেশ দায়িত্ববান ম্যানেজার" - চাপা স্বরে কার উদ্দেশ্যে মেসো কথাটা বললো ঠিক বোঝা গেল না। -"বুকিং-এর সময় ম্যাডামের সাথে আমার বেশ কয়েকবার কলকাতায় কথা বলতে হয়েছিল। অচেনা জায়গা, সে রকম পরিচিতিও নেই ভ্রমনলিস্টে, এই রকম জায়গাতে কার ভরসাতে প্রৌঢ় মানুষদের নিয়ে আসতে চাইছিলেন সেটা বোধহয় পরখ করতে আমাদের সাক্ষাৎ হয় আমার অফিসেই। " -"এখান থেকে ডেলি-প্যাসেঞ্জারি করা বেশ কষ্টকর।" - মেসোর চোখের আবার সেই হাসি। আমার খুব পরিচিত। -" আমি কলকাতাতেই থাকি। বাঙালি ছেলের ব্যবসা মন কিন্তু সে রকম পুঁজি নেই। কলকাতার ধারে কাছে এমন জায়গায় খুব অভাব যেখানে গিয়ে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়। আর কোনো জাতিতে আছে কি না আমি জানি না, তবে বাঙালির প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার একটা তীব্র ব্যাকুলতা আছে। সেই ব্যাকুলতা কে ঢাল করে নেমে পড়লাম হোটেল ব্যবসাতে। বিহারিনাথ আর এখানে। আপনাদের মতন মানুষরা যে আমাকে খুঁজে নেবে সে-বিশ্বাস ছিল। কাজের সফলতা বিচার না করে মনকে আনন্দ দিতে পারার কাজের মধ্যেই নিজেকে সবচেয়ে খুশি রাখা যায়। ম্যাডামের এত প্রশ্ন শুনে মনে হোল নিজে থেকে উপস্থিত না থাকলে , এখানকার রোজকার ম্যানেজারের উপর চাপ হতে পারে। " বাড়ির বাইরের উঠোনে কৃষ্ণপক্ষের নিবু নিবু চাঁদে অশেষ রায় আর মেসোর ডুয়েল টা বেশ ভালো লাগছিল। ঠিক ঘন্টা দেড়েক বাদে অন্য একটা ডুয়েলের মিষ্টি আওয়াজ কানে ভেসে আসছে। এবার অশেষ রায় ভার্সেস মিঠি সিনহা। মেসোর চোখ তখন বেশ খুশি খুশি। কারণ টা নিয়ে আমি দ্বন্দ্বে। বসন্তের মিহি মিহি বাতাসের আদর আর নেশার মিশেল? নাকি অনেকদিন বাদে বেশ কথার লড়াইয়ে যোগ্য প্রতিযোগীর সন্ধান পেয়ে মন টা আজ ফুরফুরে। -"কি বুঝছিস?" -" হবে কিছু একটা নিয়ে। মিঠি নিশ্চিত ভাবে কোনো ব্যবস্থাতে খুঁত দেখেছে।" -"তোর মাথা আর মুন্ডু। আমার সত্যি বেচারি পৌষানী মায়ের জন্য কষ্ট লাগছে।" -"এর মধ্যে আবার পৌষানী কোথার থেকে এলো? তোমার আজকাল দেখছি আমার বুদ্ধির উপর সন্দেহ হচ্ছে বেশ।" -"হ্যাঁ, মেয়েদের মনকে বোঝার ব্যাপারে তোর বুদ্ধির উপর আস্থা কোনদিনই ছিল না।" ঠিক কার উপর রাগ করবো বুঝতে পারছি না। মেসোর নাকি পৌষানীর নাকি নিজের উপর। -"ছেলেটার একটু বাড়ির ব্যাপারে খোঁজ নে। আমি জানি সেটা তুই ভালো পারবি।" মেসোর চোখের খুশির কারণ এখন বেশ স্পষ্ট। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, মা আর মাসীর থেকে পাত্র নিবার্চন নিয়ে ঠিক কতটা গালাগালি খেতে হবে আমাদের। -"চিন্তা করিস না। তোর মাসী কে আমি বুঝিয়ে দেব। ভাবছি, এই রকম সপ্রতিভ ছেলের জীবনের সর্বনাশ করছি না কি ভালো করছি?"
-"বাবা, মা জিজ্ঞাসা করছে, তোমার টাইমের কন্ট্রোলটা কি ঠিক আছে?"। জাম্প শটে আমি কোল বালিশ আঁকড়ে ফিরে এলাম বাস্তবের মাটিতে। কেসটা নেওয়া উচিত শুধু অশেষ রায়, মানে, আমার ভগ্নিপতির সম্মানে। বছরের অনেকটাই এখনো বাকি আছে। যাই ঠিক করি যতটা টাইম কন্ট্রোলকে মেরামত করে বাকি সময়টা ভালো থাকা যায়, যদিও এই ব্যাপারে আমার বুদ্ধির উপর মেসোর আস্থা প্রস্তাবে আমার ও পূর্ণ আস্থা।




Comments