প্রতিবিম্ব # ৭
- Abhijit Chakraborty

- Apr 1, 2020
- 7 min read

ব্রেকফাস্ট টেবিলে সাংসারিক কথার মাঝে পৌষানী মনে করিয়ে দিয়েছিল আজকে যেন একটু তাড়াতাড়ি ফিরি। ফেরার কারণ টা কি সেটা আর মনে করতে পারছি না। সেই সময় খবরের কাগজের মধ্যে ডুবে ছিলাম নির্ঘাত। এমনি এমনি কি আর কথার বিষ মাখানো তীরগুলো ধেয়ে আসে দাম্পত্য কলহে! এখন ফোন করে কারণ জিজ্ঞাসা করার সাথে হিটলারকে যুদ্ধবিরতির সন্ধি প্রস্তাব পেশ করার মিল প্রচুর । যাক গে, অত ভেবে লাভ নেই। তাড়াতাড়ি ফিরতে না পারার শক্তপোক্ত অজুহাত তো আছেই - 'চেম্বারে খুব ভীড় ছিল আজ'। কিন্তু কেন জানি না মনে হচ্ছে, আজকে তাড়াতাড়ি ফেরার কথা বেশ কিছুদিন আগেও একবার বলেছিল। আজ কি তাহলে আমাদের বিবাহবার্ষিকী? আমি ভুলে গেলেও ওষুধের কোম্পানি, ইন্সুরেন্স এজেন্ট আর ব্যাঙ্কের রিলেশনশিপ ম্যানেজার - এরা ভুলবে না। ভ্যাগিস এরা আছে। পনেরো বছরের ঝড়-ঝাপটা সামলে পাল তোলা নৌকো এগিয়ে চলেছে। নৌকোর মধ্যে জল ঢুকে, দু-চার বার বিয়েটা কোমায় চলে গেছিল বটে। সোহাগ দেখিয়ে এখন ফোন করলে ঠিক বুঝতে পারবে, কোন মতলবে ফোন করেছি।
- 'হ্যালো' - মেঘ না চাইতেই জল। ম্যাডাম ফোন করেছে।
-'পেশেন্ট দেখছ?' - অন্যদিন হলে হয়তো বলতাম, না পেশেন্টর সাথে হাডুডু খেলছি।
-'অসুবিধা নেই। বলো। রাউন্ডে যাব।'
-'আমার এক কলিগের একটা appointment দরকার।' - মুখ থেকে বেরিয়ে আসছিল - সুন্দরী? অতিকষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম।
-'নিখিলের নাম্বার দিয়ে দাও।'
-'আজকে হলেই ভালো হতো। আজ তো সোনামাসির মেয়ের বিয়ে, তাই আমিই বারণ করলাম। কাল-পরশুর মধ্যে হলে ভালো হয়। অসীম দা খুব চিন্তায় আছে ছেলেকে নিয়ে। আমিই বললাম তোমাকে একবার দেখিয়ে নিতে। বুঝতেই তো পারো, কেউ মুখ ফুটে মনের অসুখ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না।'
ইউরেকা!! সোনামাসির মেয়ের বিয়ে। হোম মিনিস্টারের মামাতো মাসির মেয়ের বিয়ে।
-'কাল সাতটা নাগাদ চেম্বারে চলে আসতে বলো। আমি নিখিলকে বলে রাখবো। ওনাকে আর কল করতে হবে না।' - পয়েন্ট পাওয়ার চান্স মিস্ করতে নেই। অসীম বাবু তার অসীম কৃপায় আজ পয়েন্ট খোওয়ানোর থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। একটা কৃতজ্ঞতা স্বীকার তো করা উচিত। ভুলে যাবার আগে নিখিলকে এখনই ফোনটা করে বলে দিতে হবে কালকের কথাটা আর আজকের পেশেন্টদের apology চেয়ে যেন জানিয়ে দেয় যে আজ আমি আর চেম্বার করছি না। বিয়ে বাড়ি যাবার জন্য চেম্বার বাতিল করে লাস্ট কবে বাড়ি ফিরেছি মনে করার চেষ্টা করলাম। মনে পড়া দুষ্কর।
বিয়ের আগের দিন থেকে বাড়ি ভর্তি লোক, শেষ মুহুর্তের বাজার ব্যস্ততা, ভোর রাতে উলু আর শাঁখের আওয়াজে ঘুম ভাঙা, হাওড়া হাট থেকে ফুল নিয়ে এসে বরের গাড়ি সাজানো, প্যান্ডেলের লোকের সাথে নরম-গরম সম্পর্ক, বরযাত্রী আর কনেযাত্রীর ভাড়াটে সৈনিক দের মাংস আর রসগোল্লা সাবাড় করার প্রতিযোগিতা, বাসররাতে অচেনা অজানা নতুন নতুন সম্পর্কের ভ্রূণ স্থাপন - পিছনে ফেলে আসা দিনের মুহুর্তগুলো এখন সুখস্মৃতি। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা ব্যস্ত জীবনে ঘড়ির কাঁটা দিয়ে প্ল্যান করা আন্তরিকশূন্য জমকালো কয়েকঘন্টার সোশ্যাল ইভেন্ট - বিয়েবাড়ির নতুন সংজ্ঞা। মেকি হাসি নিয়ে রাত ন'টার পরে টুক করে মুখ দেখিয়ে, দশটার মধ্যে ডান হাতের কাজ শেষ করে, পরের দিন সকালে বেরোনোর তাড়া না থাকলেও ভোরবেলায় ছেলের স্কুল আর আমাদের দুজনেরই কর্মক্ষেত্রে আগুন নেভানোর দায়িত্বে অবিচল থাকার অজুহাতে এগারোটা'র মধ্যে বাড়ি। একদম কর্পোরেট জগতের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর।
শরীরটা গাড়ির পিছনের সিটে এলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে মন ফ্ল্যাশব্যাকে মিঠির বিয়ের রেকর্ডিং চালু করে দিল।
বাবার পছন্দ করা মানুষকেই বিয়ে করছে মিঠি। বিয়ের সম্পর্ক টা অনেকটা হটাৎ করেই। মিঠি ইতিহাস নিয়ে মাস্টার্স করবে বলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবে পা দিয়েছে। মেসোর ইচ্ছে, মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর বিয়ে করুক। যদিও মাসি ও মা দুজনেই মিঠির ভবিষ্যতের সুরক্ষিত বাসস্থান খুঁজে দেবার জন্য এদিক ওদিক ভগবানকে ঘুষ দিয়ে যাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতেই সবচেয়ে বেশি জ্যান্ত ভগবান ঘুরে বেড়ায়। ঘুষ খাবার সুযোগও প্রচুর। তাঁর উপর একটু বেশি রকমের সুন্দরীও হয়ে উঠেছে আমার বোন। মেয়েদের এই বয়সটা বৃষ্টির পরে ডুয়ার্সের সবুজের মতন। স্নিগ্ধতা ও সৌন্দর্যের মিশেল। কতদিন আর লুকিয়ে থাকা যায় ভ্রমণ পিপাসু মানুষের ভালোবাসা থেকে। মিঠি মোটামুটি মা ও মাসির সাথে বিয়ে বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মা ও মেয়ের মান অভিমানে মেসো আপাততঃ শ্রোতার ভূমিকায়।
নিজের ছেলের জন্য মেয়ে পছন্দ করতে না পারার দুঃখ ভুলতে আমার মা কোমরে গামছা বেঁধে লেগে পড়েছে মিঠির সৎপাত্র সন্ধানে। একনিষ্ঠ কাজের রেজাল্টও হাতেনাতে পাওয়া গেলো কিছুদিনের মধ্যেই। ঘুষের প্রভাব না কি ভক্তের ভক্তিভাব কোনটা কাজ করলো সেটা বুঝতে পারি নি।
একবিংশ শতাব্দীতে বছরের হিসাব যাতে সভ্যজগতে কোনোরকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া না ফেলতে পারে তার জন্য বিশ্বজুড়ে চলা এক বিশাল যজ্ঞের পুরোহিত হলো আমাদের সৎপাত্র। যজ্ঞের সাংকেতিক নাম - Y2K। তথ্য প্রযুক্তি নামক এক ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে ব্যস্ত পাত্রের বর্তমান নিবাস মার্কিন মুলুক। মিঠির ছবি দেখে আর দু- চারবার মিঠির সাথে দূরভাসে কথা বলার পর তাঁর নাকি বোধ হয়েছে, সে বিদেশ বিভূঁইতে বড় একা। তাই এখনই বিয়ে করার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বাবা-মায়ের চিন্তা দূর করতে বিয়েতে মত দিয়েছে। আগামী শীতে বাঙালির বিয়ের হিড়িক ওঠা মরসুমে চটপট বিয়েটা করে সে মিঠিকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চায়। পরের দেড় বছর সে আর ছুটি পাবে না যজ্ঞের আগুনে ঘি দেবার কারণে।
দু-বারের চেষ্টাতে এম.ডি এন্ট্রাস টপকে আমি চন্ডীগড়ে। সাইক্রিয়াটিক স্পেশালিস্ট হয়ে মানুষের মনের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেবার পণ করেছি। সাপ্তাহিক ফোনে মিঠির বিয়ের খবরটা মায়ের থেকেই পেলাম। আমাদের ছোট্ট মিষ্টি মিঠি সুদূর আমেরিকায় চলে যাবে বিয়ের পর - আনন্দের মধ্যেও কোথাও একটা প্রিয়জনের দূরে চলে যাবার বেদনাটা মোচড় দিয়ে উঠলো। বিয়ের দিন ঠিক হবার পর থেকেই মা আর মাসির চোখের জলে কলকাতায় অসময়ে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মেসো ঠিক কি কারণে বিয়েতে নিজের মত দিলো সেটা খুব জানতে ইচ্ছা করছে। একবার মেসোর সাথে ফোনে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। বাজারের STD বুথের মালিকের সাথে আলাপটা ভালোই জমিয়ে নিয়েছি। ধারের খাতা চলে। মাঝে মাঝে ফোনের পয়সাও মাফ হয়ে যায়। দোকানের মালিকের চার মেয়ে। বিবাহযোগ্য কন্যার দায়গ্রস্ত পিতার হয়তো আমাকে পছন্দ হয়েছে ভবিষ্যতের জামাই রূপে। নিজের মনকে বুঝিয়েছি ব্যবসায়ীর 'ইনভেস্টমেন্ট'-এর রেজাল্টের জন্য আমি কেন নিজেকে দায়ী করবো!
-"মায়ের থেকে খবর টা পেলাম। খুব ভালো খবর।" - লং ডিস্টেন্স কলে গৌরচন্দ্রিকা করতে নেই।
-"ভালো করেছিস ফোন করে। তোর সাথে আমার কিছু আলোচনা করার ছিল।"
-"কি ব্যাপারে?"
-"মিঠির বিয়ের ব্যাপারে। তোর অভিমত টা পেলে সুবিধে হয়।"
আমার মতামত এতটা গুরুত্বপূর্ণ? মেসোর সাথে আমার সম্পর্কের উত্তরণে আমি ঠিক কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।
-"তুমি আমার থেকে ঠিক কি জানতে চাইছ?"
-"তোর কি মনে হয় আমি কি জানতে চাইছি?"
আবার সেই চোর-পুলিশ খেলা। মানুষের মন কতটা বুঝতে শিখেছি তাঁর পরীক্ষা?
-"আমার মনে হয় তুমি তোমার ডিসিশন কে ভ্যালিডেট করতে চাইছ আমার থেকে।"
-"আমি তো কোনো সিদ্ধান্ত নেই নি এখনো।"
-"মানে? মিঠির বিয়ে তে তুমি মত দেও নি এখনো?"
-"না। তোর কেন মনে হলো যে আমি মত দিয়েছি?"
-"কি আজে বাজে বকছো বলোতো? মা তো বললো ডেট ঠিক হয়ে গেছে। বিয়ের বাজার শুরু হয়ে গেছে। আর এখন বলছো যে তুমি ফাইনাল ডিসিশন নেও নি? অদ্ভুত।"
- "বিয়ের ডেট টা ছেলের বাড়ি থেকে প্রপোজ করেছে। "
-"ডেট টাতে কি তোমার অসুবিধা?"
-"না । "
- "কি অদ্ভুত হেঁয়ালি করছো? আমি মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। "
আমি আকাশ পাতাল ভাবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো যোগসূত্র ই খুঁজে পাচ্ছি না। মেসো এখনো অধরা আমার কাছে। মনের আলো-অন্ধকার বোঝার রাস্তা থেকে আমি অনেক দূরে। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আবার করে শুরু করলাম।
-"বিয়ের পর মিঠি অনেক দূরে চলে যাবে বলে তুমি দোটানায়?"
-" না রে। এটা দোটানা নয়। বিয়ের পর বিদেশে থাকতে হবে, এই নিয়ে আমার সে রকম কোনো আপত্তি নেই। হুট করে দেখতে চাইলে সেটা হবে না, সেটাও বুঝি। দেখতে না পাওয়ার কষ্টটা বেশি হবে সেটা জানি। এত বছর এক পরিবেশে থাকার পর সম্পূর্ণ অন্য একটা জগৎ। কোনো চেনা মানুষ নেই। আমার থেকেও মিঠির কষ্ট টাই বেশি হবে।"
-"তাহলে মিঠি কি চায় না এই বিয়েটা হোক?"
-"মিঠির মনটাই ঠিক বুঝতে পারছি না রে।"
যাক,ঠিক দিকেই তাহলে যাচ্ছি। মনে মনে নিজের একটু পিঠ চাপড়ে নিলাম।
-"হম্ম। এবার বুঝতে পারলাম তুমি আমার থেকে কি অভিমত চাইছ?"
-" কি অভিমত ? "
- " কেন এই যে বললে, মিঠির মন তুমি বুঝতে পারছো না। তারমানে তুমি চাইছ আমি মিঠির সাথে কথা বলে ওর ভাবনাটা জেনে তোমাকে যেন আমার অভিমত টা জানাই।"
-" এটাও ঠিক মিলল না। "
এবার আমার ধৈর্য্যের বাঁধে আর জল রাখা যাবে না বলে মনে হচ্ছে। আড়চোখে STD' র মিটারের দিকে তাকিয়ে ডিসাইড করলাম - আজ মালিকের মেয়ের সাথেও গল্প করতে হবে। এমাসে ধারের টাকা শোধ দেওয়া সম্ভব নয়।
-"এই রকম ভালো ছেলে তো সচরাচর পাওয়া যায় না। বিদেশে যেতে পারার সৌভাগ্য তো সবার হয় না । " - ভাগ্য ভালো আমার। নতুন করে আর আমাকে কারণ খুঁজতে হবে না। মেসোর বোধহয় আমার উপর দয়া হয়েছে। নিজের থেকেই সবিস্তারে বলতে শুরু করেছে।
-"নতুন দেশ দেখবে, নতুন আদব কায়দা। নতুন মানুষ। আমিই ওকে উৎসাহ দিলাম এই বিয়ে নিয়ে। অর্থ, সোশ্যাল স্ট্যাটাস, কোয়ালিটি লাইফ - সব দিক থেকেই যাকে বলে উইন-উইন পরিস্থিতি।"
-"তাহলে এত ভাবছ কেন? ছেলের সম্বন্ধে কোনো বাজে ফিডব্যাক পেয়েছ?"
-"দুরদেশ থেকে কি ভাবে আর ফিডব্যাক পাব ? ছেলের বাবা-মায়ের কথা শুনে তো খারাপ লাগলো না।"
-"মেসো, এবার কিন্তু তুমি বাড়াবাড়ি করছো। মিঠিকে কি তুমি সারাজীবন বাড়িতে রাখতে চাও?" - নিজের অসন্তোষ টা আর চেপে রাখতে পারলাম না। এই রকম সম্বন্ধ তো সবসময় আসে না।
-" জানি তোরা রাগ করবি আমার খটকা টা নিয়ে। কিন্তু কি করবো বল, নিজের ভাবনার সাথে তো আপোষ করতে পারি না।"
মেসোর গলাটা কি রকম বাচ্চাদের মতন লাগলো। দুস্টুমি করার পর আড়চোখে চেয়ে মাথা নামিয়ে নিজের সাফাই গাওয়ার সময় যে রকম হয়। মনে মনে আমি হেসে ফেল্লাম।
-"আচ্ছা বাবা বলো। মন খুলে বলো। এটাও বুঝতে পারছি যে তোমার এই খটকা'র কথাটা তুমি কাউকে বলতে পারো নি। কি তাই তো?" - আমার গলায় অন্যায় আবদার কে প্রশ্রয় দেবার সুর।
-"তুই দেখবি অনেক বড় ডাক্তার হবি। এটা আমার আশা নয়, দৃঢ় বিশ্বাস। ভবিষ্যতবাণী ও বলতে পারিস।"
-"আমাকে বুড়োতলা থানার মেজবাবু না ভাবলেও চলবে। তুমি এবার একটু ঝেড়ে কাশো। ফোনের বুথে লাইন লেগে গেছে।"
-"আচ্ছা, আচ্ছা। বলছি। আমি মিঠিকে মারফৎ একটু ছেলেটির ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছিলাম। মোদ্দা কথা যেটা বুঝলাম বাবাজীবন বড়ই গম্ভীর প্রকৃতির। চাকরি ছাড়া কোনো কিছুতেই তাঁর সে রকম ইন্টারেস্ট নেই। তেমন কোনো বন্ধু-বান্ধবও নেই, দেশে বা বিদেশে। আড্ডা, গানবাজনা, খেলাধুলো সবই নাকি সময়ের অপচয়। এই রকম রামগরুরের ছানার শ্বশুর হতে আমার ঠিক মন চাইছে না।"
আমি হাসবো না কাঁদবো, ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। মেয়ের পাত্র না কি শ্বশুরের জামাই নির্বাচন ?
এমন সৎপাত্র কে হাতছাড়া করার বিশেষ কোনো অভিসন্ধি খুঁজে বার করতে না পেরে গুরু আজ শিষ্যের শরনার্থী। দু-দিন সময় চেয়ে নিলাম, নিজের বিবেকের সাথে যুদ্ধের জন্য। আবার করে মালিকের মেয়ের সাথে গল্প করতে হলো - পরের সাতদিনের দশটা ফোনের বিনিময়ে। মিঠির কাছ থেকে বুঝতে পারলাম এই বিয়ে না হলেও ওর কোনো ভাবান্তর হবে না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর বিয়ের ভাবনা ভাবতে চায়। এখনই মেসোকে চোখের আড়াল না করতে বললেই সে বেশি খুশি হবে। বিবেকের থেকে সবুজ পতাকা দেখতে পেয়ে কাজে লেগে গেলাম।
পরের দু-সপ্তাহে মার্কিন দেশে তিনটে চিঠি পাঠাতে হয়েছিল। বয়ান খুবই সংক্ষিপ্ত। মিঠির প্রেমিকের বয়ানে। প্রথম চিঠিতে প্রেমিকের পরিচয় এবং অনুরোধ যাতে পাত্র নিজের থেকে বিয়ে প্রত্যাখ্যান করে। সাথে আমার আর মিঠির একটি ছবি। ভাগ্যিস, মার্ক জুকেরবাগ তখন হামাগুড়ি দিচ্ছিল। দ্বিতীয় চিঠিতে মৃদু রগরানী ও উপদেশ - পাত্র যেন একটু বড় রকমের জীবনবীমা করে বিয়ে করার জন্য ফ্লাইট ধরে। তৃতীয় চিঠির ভাষাটা আরো একটু কড়া। পাত্র যদি বিয়ে করতে আসে তাহলে প্রেমিক ও প্রেমিকা যুগল আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে এবং তাঁর জন্য দায়ী করা হবে পাত্রকে। শুধু এতেই ক্ষান্ত নয় এই যুগের রোমিও-জুলিয়েট। আত্মহত্যার আগে শেষ চিঠি যাবে পাত্রের কর্মস্থলে। প্রেমিকার উপর মানসিক অত্যাচারের ন্যায় বিচারের আশায়।
চাকরির উপর এই রকম অতর্কিত আক্রমণ বোধহয় আমাদের সৎপাত্র আশা করে নি। পরের সপ্তাহের সাপ্তাহিক ফোনে মায়ের থেকেই শুনতে পেলাম পাত্র নিজের কাজে আরো বেশি করে মন দিয়েছে তাই আপাতত বিবাহ স্থগিত অনির্দিষ্ট কালের জন্য। মিঠি হুলিয়া জারি করেছে - নিজের পায়ে দাঁড় হবার আগে যদি কোনো ভাবে মা অথবা মাসী বিয়ের কথা বলেছে তাহলে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।
-"হ্যালো"
-"এখনো বেরোও নি?"
-"অনেকক্ষণ। হটাৎ একটা কথা মনে পড়ল তাই তোমাকে ফোন করলাম।"
-"কি?"
-"তোমার সোনামাসির মেয়ের বরের বন্ধু-বান্ধব আছে?"
-"মানে? এ আবার কি প্রশ্ন? "
-"না ঠিক আছে। এমনি জিজ্ঞাসা করলাম।"
-"পাগলদের সাথে থাকতে থাকতে তোমার মাথা টাও গেছে।"
প্রাণখোলা হাসি হেসে ফোনটা কেটে দিলাম। পাগল হতে চাইলেও কি পাগল হওয়া যায়! বাইরেটা বেশ বিয়ে বিয়ে আমেজ। বিয়ের ধুতি টা আজ বার করবো ভাবছি।




Comments