top of page

প্রতিবিম্ব # ৫

  • Writer: Abhijit Chakraborty
    Abhijit Chakraborty
  • Apr 1, 2020
  • 7 min read

ree

আবার মুখ ভার। পুজোর আগে আকাশ ভেঙে পড়ার হুমকি কার আর ভালো লাগে। রাতে খাওয়া দাওয়ার পরে ছাদে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াতে ও আজকাল কড়া নজর গিন্নির। আইনের ভাষায় পরকীয়া একটু নিঃশ্বাস নেবার সুযোগ পেয়েছে। আর তাঁর সুযোগ নিয়েও আমি ও গিন্নিকে একটা মেসেজ ফরোয়ার্ড করলাম - 

'বুদ্ধদেব গুহ পরকীয়া সম্বন্ধে খুব সুন্দর একটি কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন---ভালোবাসা উদ্বৃত্ত হলে তা অন্য কাউকে দেওয়াই যায়। তিনি আরো বলেছিলেন পরকীয়া অনেকটা খোলা বারান্দার মতন।ঘরে থাকতে থাকতে একঘেয়ে লাগলে তুমি একটু বারন্দায় বেরোবে। একটু মিষ্টি হাওয়া গায়ে মাখবে , চাঁদ তারা দেখবে। তারপর রাত বাড়লে আবার ঘরে ঢুকে পড়বে।
বুদ্ধদেব গুহের কথা মানলে একটা বাড়িতে দু দুটো বারান্দা থাকতে হবে। একটা সামনে , একটা পেছনে আরে বাবা !! দুজনের জন্য তো পরকীয়া সমান।'

টুং করে আওয়াজ। উত্তর এসে গেছে।

'বারান্দার দরজার ছিটকিনিটা ভেতর থেকেই খোলা ও বন্ধ করা যায়। বাইরে কিন্তু ছিটকিনি থাকে না। আর ছাদের দরজার ছিটকিনি টাও ভেতরে।' - মুড টা মনে হচ্ছে ভালো আছে আজ। জন্মদিনের পার্টি তাহলে ভালোই হয়েছে। 

চারিদিকে আলোর রোশনাই। বাড়ির গা বেয়ে পাড়ার পুজোর আলোর মালা ঝুলছে। খোলা ছাদে একটু শীতশীতও করছে। বৃষ্টির একটা গন্ধও পাচ্ছি বাতাসে। মধ্য বয়সের গতানুগতিক উত্তেজনাহীন জীবন কেমন যেন মিয়ানো মুড়কি। সব থেকেও কি যেন নেই। আজকাল আবার একটা নতুন রোগ হয়েছে - 'কিছুই আর ভালো লাগে না'। 

ধ্যূস - কিছুই আর ভালো লাগছে না। ফ্ল্যাশ ব্যাকে আবার সেই ভালো না লাগার দিনগুলো গরুর জাবনা কাটার মতন মনে পড়ে গেল।

আজকের আকাশের মুখের সাথে সেই বছরের আমার মনের খুব মিল। আর এক বছর বাদেই মানুষ মারার লাইসেন্স পেয়ে যাব। মা-বাবার নাম উজ্জ্বল করে জ্ঞাতি-গুষ্ঠির প্রথম ডাক্তার হবার পথ মসৃন। জীবনের অনেক কৌতূহল ও মিটে গেছে শরীর কেটে কেটে। বিগত একমাস হলো কোথায় যেন জীবনের তাল টা কেটে গেছে। প্রেমের কড়া ট্যাকলে আমি মাঠের বাইরে।পৌষানীর জীবনে আমি এখন শুধু একটা ফেলে আসা নাম। দু-বছর ধরে সযত্নে বোনা স্বপ্নের মায়াজাল এখন আমার একমাত্র সঙ্গী। কলেজ থেকে ফেরার পথে জনমানবহীন প্রিন্সেপ ঘাটে একা একা বসে থাকি। কুঁড়ে কুঁড়ে খাওয়া কষ্ট লাঘব করার অভিপ্রায়ে খোলা আকাশের দিকে মুখ করে চিৎকার ও করেছি বেশ কিছুবার- 'পৌষানী আমাকে প্লিজ ছেড়ে যেও না'।

বাড়িতে চারবার ডাকলে তবে একবার উত্তর মেলে আমার থেকে। লেখার আগে শরৎ বাবু হয়তো ভাবতেও পারেন নি যে দেবদাস বাঙালী সমাজে এতবার পুনর্জন্ম নেবে। জানলে উনি বোধহয় দু-বার ভাবতেন। বাড়িতে একটা অসহযোগ আন্দোলনের পরিবেশ তৈরী করে ফেলেছি। আন্দোলন টা কার বিরুদ্ধে আর কেন সেটার অবশ্য কোনো ব্যাখ্যা নেই। এবার পুজোতে নতুন জামা নেব না। বাড়ির বাইরে বেরোবো না। দুপুরের আর রাতের খাওয়া ছাড়া নিজের ঘরের বাইরে পা রাখবো না। কলেজের বন্ধুদের টেলিফোন ও নেব না। হুলিয়া জারি করেছি, আমাকে যেন একটু একা থাকতে দেওয়া হয়। মেহেদি হাসান, গুলাম আলি আর জগজিৎ সিং ছাড়া তো কেউ আমাকে বুঝলো না!

-'দরজাটা খোল , কথা আছে।'

দরজার কড়া নাড়ার শব্দ বেশ কয়েকবার।এই মানুষ টাকে উপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। কোনো রকম প্রলোভনেই পা দেব না। এই আন্দোলন আমাকে চালিয়ে যেতেই হবে। নিজেকে আরো, আরো বেশি করে কষ্ট দিতে হবে। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক আমার এই আন্দোলনের কথা। ক্ষীণ আশা, পাঁচ কান হয়ে নিশ্চিতরূপে এটা পৌষানীর কাছে পৌঁছবে। আশায় বাঁচে চাষা। 

-'কালকে সন্ধ্যেতে রেডি থাকিস। দিন-দুয়েকের জামা কাপড় নিয়ে নিস।' - দরজা খুলে বেরোতেই মেসোর নির্দ্দেশ।
-'না, আমি কোথাও যাব না। পুজোতে বাড়িতেই থাকবো।'
-'কাল সন্ধ্যে সাড়ে ছ'টার সময় আসব।' আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মেসো বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।

পুজোর মধ্যে কলকাতার বাইরে তো মেসো কখনো যায় না। বিসর্জনের পরের দিন  অবশ্য প্রতি বছরই একা একা বেরিয়ে যায়। দু-তিন দিনের জন্য। কখনো কোনো সাঁওতালি গ্রাম, কখনো বা চা-বাগানের কুলি-কামিনদের গ্রাম। তাহলে কাল কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে? নাহ, পৌষানীর আর আমার জীবনে ফিরে আসা হলো না। রেগে মেগে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে।

কলা বউ এসেছে আজ। সকাল থেকে ঢাকের আওয়াজে পাড়া গমগম করছে। বাড়ি ভর্তি লোক। মিঠি এসে অনেকবার ডেকেছে ওর নতুন কলেজের বন্ধুদের সাথে আলাপ করিয়ে দেবার জন্য। দিক ভ্রষ্ট হবার ভয়ে ঘর থেকে বেরোলাম না। সারা দুপুর দরজা আটকে ভাতঘুম দিয়ে আমি রেডি।

সন্ধ্যে আটটা। আমি আর মেসো হাওড়া স্টেশনে। বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসা করা পরে বুঝলাম, আমরা শিমুলতলা যাচ্ছি। বঙ্কিমের সময় থেকে স্বাস্থ্য উদ্ধারে বাঙালির পশ্চিমে যাবার একটা প্রবণতা আছে। গান্ধীজীর আন্দোলনের সাথে মধুপুর, গিরিডি, শিমুলতলা র কি কোন নাড়ির যোগ সেটা আমার জানা নেই।

নটা পাঁচের দিল্লি-জনতা এক্সপ্রেসের অন্ধকার বগিতে উঠে বসলাম। মেসো জল আর রাতের খাবার আনতে গেছে। আলো কখন জ্বলবে তার প্রতীক্ষায় বসে আছি। ট্রেনটা বেশ ফাঁকা। হটাৎ ধুপধাপ করে বেশ কিছু ছেলে আমাদের কামরা তে উঠেই কাজে লেগে পড়লো। মিনিট দুই যেতেই বুঝতে পারলাম কেন এখনো বগিতে আলো জ্বলে নি। রেল পুলিশের বদানত্যায় কিছু বেকার যুবকের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। তোলাবাজ দের গলার আর তার সাথে চড়-চাপাটির আওয়াজ টা আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। হাত ঘড়ি আর পকেটে দেড়শো টাকা - এটাই আমার সম্বল। ঘড়ি টা খুলে পকেটে রাখলাম। অন্ধকারে চোখটা এখন সয়ে গেছে। দুটো ছেলে , একজনের হাতে একটা খোলা ছোরা, একজনের হাতে লোহার একটা চেন।

-"জলদি বার কর, বেশি ট্যাফো করলে একদম ঢুকিয়ে দেব ।" 

জড়ভরত অবস্থা আমার। মেসো কে ডাকার চেষ্ঠা করছি, গলা দিয়ে গোঁ-গাঁ আওয়াজ ছাড়া আর কিছু বেরোচ্ছে না। পৈতে তে পাওয়া জীবনের প্রথম ঘড়ি। প্রাণ থাকতে আমি এটা দেবো না। কি মনে হলো, আমি কামরার উল্টোদিকে ছুটতে শুরু করলাম। দরজা অব্দি এসেছি, আলো গুলো জ্বলে উঠলো। আমি এক লাফে স্টেশনে নেমেছি, সামনে মেসোর হাসি মুখ। হাতে কাগজে মোড়া রুটি আর আলুরদম।

মাঝরাতে শিমুলতলা থামার কথা। মেসো কে ওপরের সিটে শুয়ে পরতে বলে আমি নীচের সিটে আধশোয়া অবস্থাতে জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছি। বিগত চার-বছরের মুহূর্ত গুলো বারে বারে ফিরে আসছে। ইংলিশ টিউশন সেন্টারে প্রথম দেখা। ছোট থেকে ছেলেদের স্কুলে পড়া জীবনে প্রথম মেয়ে বন্ধু। আমি ডাক্তারিতে ভর্তি হলাম আর ও লেডি ব্রেবোন। ইতিহাস নিয়ে পড়তে। তিনবার অসফল চেষ্ঠার পর, চতুর্থ বারে পাড়ার পিকনিকে বলেই ফেল্লাম মনের কথা। চোখে চোখ রেখে। খিলখিলিয়ে হেসে বলেছিল - 'এত দিন লাগলো সাহস জোগাড় করতে?' এর পরের দিনগুলো যেন রূপকথা। চাঁদের আলোয় ভেজা মন প্রেমের কবিতায় সাজিয়ে তুলছে একে অপরকে। ময়দানের শীতের দুপুর, বৃষ্টি মাখানো কার্জন পার্ক , গরম থেকে বাঁচতে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের পেছনের সিঁড়ি - আমাদের রূপকথার সাক্ষী। গতবছরের পুজোর স্মৃতি গুলো এখনো ভীষণ ভাবে টাটকা। মেডিকেলের বন্ধুদের কাছে সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড কে পরিচয় করানোর গর্ব আর তারপর গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে ম্যাডক্স স্কোয়ারের মধ্যরাতের রোমান্টিক গন্ধ আর স্পর্শের আবর্তে নিমজ্জিত প্রেমময় পুজো।

মধুপুর ছাড়ার মিনিট পনেরো বাদে আমি আর মেসো দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি। ট্রেনের গতিবেগ আস্তে আস্তে কমছে। ট্রেন থামার পর দরজা খুলে কোনো প্ল্যাটফর্ম দেখতে পেলাম না। দরজার সাথে লাগানো সিঁড়ি বেয়ে মেসো কে নীচে নামতে দেখে আমিও নেমে পরলাম। 

-'এটা কি কোনো স্টেশন?'
-'ছোট স্টেশন। আমরা মনে হয় উল্টোদিকে নেমেছি। ট্রেন টা বেরিয়ে যাক, দেখতে পারবি প্ল্যাটফর্ম।' - একটা কু-ডাক শুনতে পাচ্ছি মনে হলো। 

ট্রেনের পেছনের লাল আলোটা অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। ঝিঝি পোকার ডাক আর নির্জ্জন দিগন্তহীন রেল লাইনের পাশে অসহায় দুটো মানুষ নিশ্চুপ। অজানা, অচেনা, অনিশ্চিত বিপদের আশঙ্কাকে সরিয়ে ভয় না পাওয়াটা এখনো অভ্যেস হয় নি। সাময়িক ঝটকাটা কাটিয়ে বেশ দূরে, রেলের সিগন্যাল কেবিনের আবছা হলুদ আলো খুঁজে পেল চোখ।

-'এত ঘাবড়াচ্ছিস কেন? আমি তো আছি। ওই সিগন্যাল কেবিনে কেউ না কেউ থাকবে।' 

অকুতোভয় মেসোর চোখে প্রথমবার অনিশ্চয়তার আভাস দেখতে পেলাম। দুজনেই চুপ করে শেষ রাতের নিবু নিবু অর্ধেক চাঁদের আলোতে ট্রেনের লাইন ধরে সিগন্যাল কেবিনের দিকে হেঁটে যাচ্ছি। মাস দুয়েক আগেও প্রিন্সেপ ঘাট স্টেশনের সামনের রেললাইনের উপর হাত ধরে হেঁটেছিলাম কারুর সাথে, আর আজ তাঁকে ভুলতে চেয়ে কলকাতার থেকে কয়েকশো মাইল দূরে রাতের অন্ধকারে অজানা বিপদ থেকে বাঁচতে হাঁটছি। জীবন কত অনিশ্চিত।

সিগন্যাল কেবিনের দেয়ালের লেখাটা পড়া যাচ্ছে না। কেবিন থেকে একশো গজ দূরে উল্টোদিকে একটা ছোট বাড়ি নজরে এলো। রেললাইন থেকে ফুট তিরিশ দূরত্বে টিনের চাল দেওয়া ইটের একতলা বাড়ি। খুব হালকা একটা আলোর রেখা বেরিয়ে আসছে দরজা দিয়ে। মানুষ থাকার সম্ভাবনা তাহলে আছে। মেসোর মতানুযায়ী কেবিনে যাবার থেকে ওই বাড়িতে যাওয়াই আমাদের জন্য সুরক্ষিত। নিজের মন কে সাহস দিচ্ছি। 

বাড়ির বারান্দা পার করে আলতো করে ভেজানো দরজাতে হাত দিয়ে ঠেলতেই ভূতের গল্পের দরজা খোলার আওয়াজ পাওয়া গেল। দরজার সোজাসুজি একটা টেবিল। টেবিলের উপর একটা হ্যারিকেন। হ্যারিকেনের আলো পনেরো বাই কুড়ি ফুটের ঘরটাকে একটা কেমন অশরীরী পরিবেশ করে তুলেছে। টেবিলের ওপারে আপাদমস্তক কম্বল দিয়ে ঢাকা একটা আবছায়া মূর্তি স্থবির দৃষ্টিতে চেয়ারে বসে আমাদের দিকে চেয়ে আছে। আবছায়া মূর্তির চোখ আর মেসোর চোখ সোজাসুজি। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক টাও বন্ধ হয়ে গেল মনে হচ্ছে। মৃত্যু শীতল নিস্তব্ধতা চারিদিকে। মানুষ আর ভূতের সংলাপ ও তাহলে সত্যি হয়! শেষ অক্টোবরের শেষরাতের বিহারের ঠাণ্ডাতেও আমি ঘামছি। 

-"আপলোগ সহি সালাহামাত হো ? আপকা সামান সব ঠিক হ্য় তো! " - এই রকম ব্যারিটোন গলা ভূতের হয় না কি! মেসোর দৃষ্টিতে ভূত কি আবার মানুষ হয়ে গেল নাকি! 

ভোরের আলো ফুটতে আরো কয়েক ঘন্টা বাকি। 'লাহাবনে'র স্টেশন মাষ্টারের আতিথেয়তায় বারান্দায় খড়ের বিছানায় রাতের বিশ্রামের ব্যবস্থা বেশ ভালোই। আমাদের মতন কিছু মানুষ প্রায়ই ওনার শরণ নেন। রেলপুলিশ ও সিগন্যালের জোটের ফলাফলে লাহাবনের বিখ্যাত ডাকাত দলের কাছে সর্বস্ব খুইয়ে জন্মদিনের পোশাকে আমাদের দেখতে না পেয়ে উনি বেশ অবাক হয়েছিলেন এটা বুঝতে পেরেছিলাম। ওনার অতিথি হয়ে থাকার থেকে পায়ে হেঁটে রাতের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে শিমুলতলা যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম মেসো কে। মাত্র তো দশ কিলোমিটার। মেসো এমন ভাব দেখিয়ে খড়ের গাদায় ঝাঁপ দিলো মনে হলো যেন, এমন বিছানাতে ঘুমের জন্যই কলকাতার প্রিয় পুজো ছেড়ে আমাকে নিয়ে ভারত ভ্রমণে বেরিয়েছে। আমার ঘুম আসছে না। স্টেশন মাষ্টারের উপর সন্দেহটা কিছু তেই যাচ্ছে না।

-"তুই যা ভাবছিস সেটা নয়। উনি খুবই ভালো মানুষ। সকাল  সাতটা নাগাদ মোকামা প্যাসেঞ্জার থামে এখানে। ওটাতে তুলে দেবে আমাদের, কথা হয়ে গেছে। তুই এখন আরাম করে ঘুমিয়ে পর। সারা রাত তো জেগে আছিস। "
-"তুমি সবাইকে এত সহজে বিশ্বাস করো কি করে?"
-"বিশ্বাস করা তো একটা অভ্যেস। বিশ্বাস করা টা প্র্যাকটিস কর। দেখবি তোর আশে পাশের মানুষ গুলোই পাল্টে যাবে।"

আমি বিশ্বাস করলেই পৌষানী ফিরে আসবে? বিশ্বাসের এত জোর!

-" কুলীন ব্রাহ্মণ বাড়ির বড় বংশের মেয়ে তোর মাসি। আমি চালচুলোহীন গ্রামের ছেলে। আমাদের বিয়ে নিয়ে তোর দাদু-দিদা'র সাথে কি ঝগড়া-ঝামেলা করেছিল সেটা একবার তোর মাসির থেকে শুনে নিস। শুধু ওই বিশ্বাসের উপর ভরসা করেই তো এখনো আমরা বেশ আছি। "
-"তোমরা তো মেড ফর ইচ আদার। সবাই তোমার মতন ভাগ্যবান নয়"।
-"যাঁর দুঃখে বাড়ির আর পাঁচজনকে কষ্ট দিচ্ছিস তাঁকে আর একটু বিশ্বাস করলে এখন হয়তো কলেজ স্কোয়ারে আর মহম্মদ আলী পার্কে র ভিড় ঠেলে এগরোল খেতে পারতিস।

সুপার ফার্স্ট এক্সপ্রেস মাটি কাঁপিয়ে যাচ্ছে। বড় অদ্ভুত লাগছে। বুকের উপর চেপে থাকা পাথর টাকে সরে যাচ্ছে ট্রেনের আওয়াজ। অনেক দিন বাদে প্রাণভরে প্রশ্বাস নিতে পারছি। এতটা স্বার্থপর আমি! শুধু নিজের ভালোলাগার জন্য এতগুলো মানুষকে কষ্ট দিচ্ছি! আমার জন্য মাসি'র মেসোকে নিয়ে মুদিয়ালি আর শিবমন্দির ঘোরা হচ্ছে না। মা-বাবা'র কাছেও পুজোর আনন্দটা উবে গেছে। মেসোকে পাড়ার কত মানুষ মিস্ করছে। মেসোর কষ্টটা তো ছেড়েই দিলাম। আমাকে কালকেই যে করে কলকাতা ফিরে যেতে হবে। স্টেশন মাষ্টার নিশ্চয়ই ট্রেন থামিয়ে আমাদের কে কলকাতা গামী কোনো ট্রেনে তুলে দিতে পারবে।

একটু একটু করে আকাশ পরিষ্কার হচ্ছে। মহাঅষ্টমীর সবুজ ভোর এত সুন্দর হতে পারে তার কোনো ধারণা ছিল না। নিজের থেকেও অন্যের আনন্দে এত খুশি হওয়া যায় - জানতাম না। নিজেকে মেসোর মতন ভাগ্যবান বলে মনে হতে লাগল।

-"শুতে আসবে না ?"

পৌষাণীকে ছাদে দেখতে পেয়ে বেশ অবাক লাগা ভালোবাসাতে মনটা ভরে গেল। পৌষানীর কি এখনো আমার সাথে গল্প করতে ভালো লাগে! মেসোর বিশ্বাসে ভর দিয়ে নিজেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

Comments


©2020 by Hizibizi Online

bottom of page