জয় শ্রী রাম
- Abhijit Chakraborty

- Apr 7, 2020
- 2 min read

অফিস থেকে ফেরার সময় মনটা অহেতুক অগোছলা হয়ে গেল। আশে পাশের বয়ে চলা ঘটনার থেকে বেশ নিরাপদ দূরত্বে থেকে 'এই বেশ চলছে' টাইপ সুবিধাবাদী ভাবনা নিয়ে বেঁচে থাকার অভ্যস্ত জীবনে কোথায় যেন একটা ছন্দপতন।
অনেকদিন আগে ছেড়ে চলে যাওয়া বাবা আর বছর পাঁচেক আগে অনাথ করে চলে যাওয়া মায়ের মুখ গুলো কেমন শুকনো লাগছে। আমি শুধোলাম - "এই রকম ভয় পেয়ে যাওয়া মুখ কেন?" -"আমাদের নিয়ে তোকে কোনো অসুবিধায় পরতে হবে না তো বাবু?" আমি তো মাথা চুলকে যাচ্ছি। আমার কি সামনে কোনো বিপদ আসছে? বাবা-মায়ের মন, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরায়। কোন অশনি সংকেতের অদৃশ্য বিদ্যুৎ চমকাতে দেখতে পেয়েছে? -"আমরা তো এই দেশকেই তোর দেশ বলে চিনিয়েছি। স্বাধীনতার দিন মাঝরাতের উল্লাসে শৈশব পেরোনোর স্মৃতিকে প্রমাণ করার দায় তোর উপরেও কি আসছে?" - বাবার রাশভারী গলাতে ও কেমন হতাশার সুর। ভয় করতে শুরু করলো। এখন যদি বাবা-মা বেঁচে থাকতো তাহলে দেশের কাছে আমার অস্তিত্ব স্বীকারের দায়ভায় কে নিত? দেশ না ধর্ম? বাবা-মায়ের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বিগত সত্তর বছরের পুরনো দস্তাবেজ খোঁজার জন্য সাতটা ভাড়া বাড়ির অস্তিত্ব - আজ বড় প্রয়োজন। দেশের রাজার হুঙ্কার, দেশকে পবিত্র করতে হবে। দেশের জন্য জীবন নিতে প্রস্তুত নাগরিক সৈনিকের আস্ফালনে খুব ভয় করছে। সন্তানকে ঠিক দেশের সংজ্ঞা বলার ব্যাপারে আমিও কি আমার বাবার মতন ভুল করছি? নতুন করে আবার ইতিহাসকে চিনতে হবে কি? আজকের দিনের পৃথিবীর স্বপ্ন ,'গ্লোবাল ভিলেজ'-এর উদারতা ও জ্ঞানের পরিবর্তে আমরা নতুন করে কাঁটা তারের খেলায় মেতেছি। সাথে ধর্ম নিয়ে একটু চুলকানি। ধর্ম নিয়ে রাজনীতির খেলাটা নেশা ধরানো। রাজাই আজ ভগবান, আমাদের সবার ভাগ্য-বিধাতা। -"না বাবা, আমার কোনো ভয় নেই। শুধু একটাই কষ্ট হচ্ছে , ছোটবেলাতে স্কুলের প্রেয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে গাওয়া - 'এই দেশেতেই জন্ম যেন এই দেশেতেই মরি' গানের সময় যে গর্ব টা অনুভব করতাম , সেটা হারিয়ে ফেলছি। " বাবা-মায়ের মুখটা এখন বেশ খানিকটা নিশ্চিন্ত। বোকা মানুষ তো, অল্পেতে বুঝে যায়। আমি নিজেকে কি বোঝাবো এখন? এখনো ঘুমিয়ে থাকবো? আমার তো আর মা-বাবা'র নাগরিকত্বের প্রমাণের দায় নেই, আমার কি আর চিন্তা! সবই এখন ভগবান রামের হাতে। জয় শ্রী রাম।




Comments