ইন্ডিপিন্ডস ডে
- Abhijit Chakraborty

- Apr 7, 2020
- 2 min read

ইন্ডি পিন্ডি চটকে ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে সেলিব্রেশন করার একটা সুযোগ এসে গেল স্বাধীন হবার রাতে অফিস ফেরত ছোট্ট একটা দৃশ্য দেখে। রাসবিহারী মোড়ের কাছে কিছু ছেলে, বোধহয় বখাটে হবে, খুব ব্যস্ত। কালকের পাড়া ফুটবল আয়োজনে যেন কোনো ত্রুটি না থাকে।
ফ্ল্যাশব্যাকে ছোট বেলার আমাদের গলির এই দিনটার কথা ভেসে উঠলো। পনেরো ফুট এর চওড়া গলি অনেক স্মৃতির সাক্ষী। রেণু কাকিমার দোতলার খোলা রান্নাঘর কে লর্ডসের ব্যালকনি ভেবে সুজয়ের 'বাপি বাড়ি যা'। ডিমের ঝোলে স্যাতলানো বলটা আনতে যাবার সাহস পাই নি সেদিন। ভেস্তে যাওয়া খেলার জন্য সুজয়ের বাপ-ঠাকুরদা তখন আকাশে বাতাসে, ডিমের ঝোলের গন্ধ মাখা বলটা ফিরিয়ে দিয়ে রেণু কাকিমার প্রশ্রয়মাখা বকা টা ভুলতে পারি নি এখনো।
স্বাধীনতা দিবসের স্কুলের অনুষ্ঠানে এবার যাবো না, মায়ের কাছে আব্দার। আমি এবার পাড়ার ফুটবলের কর্মকর্তা বলে কথা। দায়িত্ব বোধের একটা ব্যাপার আছে তো নাকি। পিচের গলিতে খালি পায়ে রবারের বলে কৃশানু-বিকাশ জুটিতে নিজেদের আত্ম-সম্মান রাখার প্রশ্ন। পুরো পাড়াটা জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজাতে হবে, বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী গোল পোস্ট, নেট ও কিনে আনা হয়েছে, ওটাকে বাঁশের সাথে আটকে আবার বেশ কিছুটা টানটান করে রাখা। কম কাজ? খরচ ও নেহাত কম নয়। গত এক সপ্তাহ ধরে চাঁদা তোলা। নান্টু এই ব্যাপারে বেশ পটু। বাঙালীর সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দিয়ে মাসের মাঝে বাবলু কাকু, শ্যামল জেঠু এমনকি রেণু কাকিমার থেকেও সংসার খরচের টাকাতে ভাগ বসাতে সিদ্ধহস্ত।
খেলা হবে অথচ তার ধারা বিবরণী হবে না, এ হতে পারে না কি? মন্টুদার থেকে ধারে সন্তোষের বক্স ও হাজির। সকাল থেকে 'মুক্তির মন্দিরও সোপান তলে' পাড়াটাকে বেশ এক দেশাত্মবোধক করে তুলেছে। চুনের দাগ দেওয়া সেন্টার পজিশন, পেনাল্টি বক্স আর সাইড লাইন - কোনো পার্থক্য নেই মারাকানার সাথে।
বুক টা গর্বে ফুলে উঠছে। সকালের বাজার করতে যাওয়া বাবা-কাকা দের সাথে দুপুরের পর থেকে মা-কাকিমা রাও হাজির। আশে পাশের পাড়ার চেনা মুখ গুলোও গোলপোস্টের পেছনে। পিচের রাস্তাতে খেলতে গিয়ে নখ উঠে যাওয়া রক্তাত্ব পা - কোনো পরোয়া নেই। খিলখিলিয়ে ওঠা হাসির রিনিঝিনি ই আজকের ভোকাল টনিক।
খেলা শেষ। পাড়ার রকে বড়দের মজলিসে আমাদের সাফল্যের আলোচনা হচ্ছে। পুরো পাড়া কেমন এক সুতোতে বাঁধা। রাতে বাবার পাশে শুয়ে একটা প্রশ্ন করেছিলাম - "বছরের প্রতিদিন সবাই এই রকম একসাথে কেন থাকতে পারি না"।
-"কেন থাকতে পারব না? শুধু বছরের বাকি দিনগুলো আজকের মতন স্বাধীন দিন হতে হবে আর উত্তরসূরীর সাফল্য কামনায় নিজেদের স্বার্থের উপরে ওঠার উদারতা প্রকাশ করতে হবে।
সেদিন ও উত্তর টা বুঝি নি, আজও বোঝার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।




Comments