পান্ডে জী
- Abhijit Chakraborty

- Apr 7, 2020
- 3 min read

রাতে শুতে যাবার আগে মেয়ের রোজকার আবদার গল্প শোনার। রামায়ণ, মহাভারত, দঙ্গল, সিক্রেট সুপারস্টার, হিরোশিমা-নাগাসাকি, ফেলুদা - গল্পের ব্যাপ্তি বেশ রকমদার। কিন্তু গল্পের ভান্ডার তো আর কুবেরের ধন নয় আর চাহিদাও বেশ ঊর্ধ্বমুখী। অনেক ভেবেচিন্তে আজ একটা ভালো আইডিয়া পাওয়া গেছে। না , জীবন পাল্টে দেবার কোনো আইডিয়া নয়। আজ না হয়, ওর ছোটবেলার গল্পই ওকেই বলি। মেয়ে খুব খুশি। হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলাকে সবাই বোধহয় খোঁজে - সে আট ই হোক বা আশি। তোর বয়েস তখন বছর তিনেক। জন্মদিনে ঠাম্মার থেকে একটা তিন চাকা সাইকেল বাগানো গেছে। আর সেটা নিয়ে হল ঘর দাপিয়ে বেড়ানো হচ্ছে। মাঝে মাঝেই সাইকেলটা অটো রিকশা হয়ে ভাড়া খাটে, কখনো পোস্টম্যান আবার কখনো ফ্ল্যাটে দুধ দিতে আসা বিহারের পান্ডে জী। হটাৎ একদিন রাতে একটা আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেল। আওয়াজ টা খুব চেনা, কিন্তু ঠিক কিসের সেটা বুঝতে একটু সময় লাগল। হলঘর থেকে আসছে। শীতের রাত, লেপের থেকে বেরোতেও ইচ্ছা করছে না। আওয়াজটা একই ভাবে হয়ে যাচ্ছে। রাত দুপুরে কেমন একটা অস্বস্তি। তুই আর তোর মা দুজনেই এবার নড়াচড়া শুরু করেছিস। বিছানা থেকে নেমে ঘরের দরজাটা খুলে হলঘরে যেতে যাব, আওয়াজ টা বন্ধ হয়ে গেল। যাক, শান্তি। পরের দিন সকালে ঠাম্মাও বললো রাতে কিসের একটা আওয়াজ হচ্ছিল কিন্তু ঠান্ডা লাগার ভয়ে বিছানা থেকে নামে নি। আমি আর কথা বাড়ালাম না। অফিসের কাজের মধ্যে রাতের ঘটনাটা নিয়ে ভাবার আর ফুরসৎ পাই নি। রাতের ঘুমের মধ্যে আবার সেই অস্বস্তি ফিরে এসেছে। আবার সেই আওয়াজ। কি করব ভাবছি। তাঁর সাথে তোর মায়ের আমাকে সাহস জোগানোর মন্ত্র - 'ছেলে হয়েও ভূতের ভয়?' আমি বীরদর্পে হলঘরে এসে দাঁড়িয়েছি। আওয়াজটা কিন্তু বন্ধ হয় নি। হলঘরের একদম শেষ দিকে অন্ধকারের মধ্যে একটা লাল আলো জ্বলছে আর নিবছে। কেমন একটা অশরীরী ভাব চারিদিকে। ঠাম্মার ঘরের দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। অন্ধকারে ঠাম্মার আবছায়াটা দেখতে পাচ্ছি। মনে কেমন একটা বল পেলাম মনে হলো। সাহস করে হলঘরের লাইটের সুইচ টা অন করলাম। সাথে সাথে আওয়াজ আর ওই লাল আলোর খেলা বন্ধ। হলঘরের শেষ প্রান্তে তো সাইকেলটা আছে। সাহস করে সাইকেল অব্দি যেতে পারলাম না। ঠাম্মাকে বললাম রাতে আবার আওয়াজ হলেও যেন না ওঠে। শুতে যাবার আগে ঘড়ি দেখলাম, গতকালের মতন ঠিক রাত আড়াইটে। সারাদিন অফিসে পরপর দু-দিনের রাতের ঘটনার কথা ভাবতে ভাবতে বেশ কিছু ভুলও করলাম কাজে। রাতে শুতে যাবার আগে, ঠিক করলাম আজকেও যদি রাতে বাজে তাহলে কিছু একটা করব। কি করব যদিও সেটা জানি না। তোর মাকেও রেডি থাকতে বললাম রাতের একশনের জন্য। ঘুমটা উত্তেজনায় লোপাট। একটা পনেরো। ঘরের দরজা খুলে একবার দেখে এলাম সাইকেলটা। নিঃশ্চুপ জড় পদার্থের মতন এক কোনে পরে আছে। লেপ টা ভালো করে মাথা অব্দি মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি আর প্রাণপণে প্রার্থনা আর যেন ওই আওয়াজটা শুনতে না হয়। দুটো পঁচিশ। আর মাত্র পাঁচ মিনিট। ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটা টার আওয়াজও আজ খুব স্পষ্ট। একটা থমথমে, দমবন্ধ করা পরিবেশ। নাহ। আর পারা গেল না। আবার সেই আওয়াজ আর আজকের আওয়াজটা যেন কেমন একটা অপ্রতিরোধ্য, কর্কশ। মা, ঠাম্মাও উঠে পড়েছে। সবাই আমরা সাইকেলের কাছে। হলঘরের আলো জ্বলছে, তাও আজ সাইকেলের দু-ধারে লাগানো মিউজিক্যাল লাল আলোর থামার কোনো লক্ষণ নেই। হর্ন বাজলেই ওই আলোটা বাজার কথা। আমি গিয়ে হর্ন টা বন্ধ করতেই চারিদিকে একটা নিস্তব্ধতা নেমে এল। আমার কানের কাছে আওয়াজ টা কিন্তু বন্ধ হলো না। ঠাম্মার আদেশ, কালকেই যেন এই সাইকেলটা কোথাও ফেলে দিয়ে আসা হয়। পরের দিন ওই সাইকেলটা দোকানে প্রায় নামমাত্র দামে ফেরত দিয়ে নতুন আর একটা সাইকেল নিয়ে আসা হলো, কোনো হর্ন বা আলো ছাড়া, ওই পান্ডে জীর সাইকেলের মতন। - 'জানো বাবা, পরশু দিন যে ব্রিজটা ভেঙে পড়েছে, তাতে পান্ডে জী চাপা পড়ে মারা গেছে।' -'তোকে কে বলল?' -' তিন্নি দিদি। পান্ডে জী তো ওই দিকেই থাকতো।' -'শুয়ে পর, কাল সকালে স্কুল আছে।' গল্পের আইডিয়া টাও কি ওই লাল আলোর মতন কাকতলীয়?




Comments